
চান্দিনার আঞ্চলিক সড়কে অতিরিক্ত বালু বোঝাই ডাম্প ট্রাক
।।চান্দিনা প্রতিনিধি।। (কুমিল্লা )
কুমিল্লার চান্দিনা উপজেলার বিভিন্ন আঞ্চলিক সড়কে প্রতিনিয়ত চলাচল করছে অতিরিক্ত বালু, পাথর ও ইট বোঝাই ডাম্প ট্রাক। আঞ্চলিক সড়কগুলোতে চলাচলরত মালবাহী যানবাহনের নির্ধারিত ওজনের তিন গুনেরও বেশি ওজন বহন করে অবাধে চলছে ওইসব ডাম্প ট্রাক। ওই ট্রাকগুলোতে মাত্রাতিরিক্ত ভারী পণ্য পরিবহনের ফলে সরকারের কোটি কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত গ্রামীণ ও আঞ্চলিক সড়কের ব্রিজ-কালভার্ট ভেঙে যাচ্ছে এবং পাকা সড়কও দেবে সৃষ্টি হচ্ছে গভীর খানাখন্দ। এতে একদিকে জনদুর্ভোগ বাড়ছে, অন্যদিকে ঝুঁকির মধ্যে পড়ছে স্থানীয় মানুষের জীবন ও যানবাহন চলাচল। প্রশাসনের পক্ষ থেকে কার্যত কোন ভূমিকা না রাখায় দিনে দিনে বেপরোয়া হয়ে উঠেছে ডাম্প ট্রাকে মালামাল পরিবহন চক্রটি। স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর সূত্র জানায়-আঞ্চলিক সড়কগুলোতে সর্বোচ্চ ৮ মে. টন ওজন বহন করার ক্ষমতা রয়েছে। আর ডাম্প ট্রাকগুলোতে বালু বোঝাই করলে তার ওজন হয় ২৫ মে. টন এবং পাথর ও ইট বোঝাই করলে তার ওজন হয় ২৭-২৮ মে.টন। যা জাতীয় মহাসড়কের জন্যও ক্ষতিকর। উপজেলার একাধিক বাসিন্দা অভিযোগ করে বলেন- এমনিতেই চান্দিনা উপজেলার অধিকাংশ সড়কের বেহাল দশা। এমন বেহাল
সড়কগুলোতে প্রতিনিয়ত বালু, পাথর ও ইট বোঝাই ডাম্প ট্রাক রাত-বিরাতে দাপটের সাথে চলাচল করে। আর বেশি ব্যবহার হচ্ছে বালু পরিবহণে। উপজেলার ইউনিয়ন পর্যায়ের যে কয়েকটি ভাল সড়ক রয়েছে সেগুলোতেও ডাম্প ট্রাক চলায় পিচ উঠে মাটি দেবে ছোট-বড় গর্ত সৃষ্টি হয়ে যান চলাচলের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। বৃষ্টি হলে সেই গর্তে পানি জমে যানবাহন চলাচল আরও বিপজ্জনক হয়ে পড়ছে। বিশেষ করে
স্কুল-কলেজগামী শিক্ষার্থী ও রোগীবাহী যানবাহনের জন্য পরিস্থিতি ভয়াবহ রূপ নিয়েছে।
চান্দিনার বাড়েরা গ্রামের নূরুল ইসলাম জানান- বাড়েরা-চান্দিনার মূল সড়কটিতে যান চলাচল করা প্রায় অসম্ভব হয়ে পড়েছে। আমরা চান্দিনা যেতে হলে বাড়েরা থেকে সাতবাড়িয়া-কেরণখাল হয়ে ঘুরে যেতে হয়। ওই সড়কটি মোটামুটি ভাল ছিল। কিন্তু কিছু অসাধু ব্যক্তি ডাম্প ট্রাকে বালু এনে ওই বালু ড্রেজিং করে মানুষের জায়গা ভরাট করে। আর ওই ডাম্প ট্রাক চলাচলের ফলে ভেঙ্গে গেছে বাড়েরা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সামনের ব্রিজটি। আমরা স্থানীয়রা বাঁধা দিলেও কেউ আমাদের বাঁধা শুনেনি। এখন ওই ভাঙা অংশে পড়ে আটকে যাচ্ছে সিএনজি অটোরিজসহ বিভিন্ন যানবাহন। আহত হচ্ছে পথচারীরা। ব্রিজটি ভাঙ্গার পর এখন ডাম্প ট্রাক চলা বন্ধ হয়েছে। উপজেলার শ্রীমন্তপুর গ্রামের বাসিন্দা তানজির ইসলাম জানান- চান্দিনা-শ্রীমন্তপুর সড়কটির মতো খারাপ সড়ক চান্দিনার আর একটিও ছিল না। গত দুই মাস আগে ৪০ লক্ষ টাকা ব্যয়ে তিন কিলোমিটার সড়কটিতে ইট ও বালু ফেলে কিছুটা সংস্কার করে পৌর কর্তৃপক্ষ। কিন্তু সড়কটিতে নিয়মিত ডাম্প ট্রাক চলাচলে আবারও আগের চেহারায়
ফিরে এসেছে। উপজেলার সচেতন মহল মনে করছেন- সড়কে অতিরিক্ত বোঝাই যানবাহন নিয়ন্ত্রণে না আনলে আগামী কয়েক মাসের মধ্যেই পুরো উপজেলার সড়কগুলো দিয়ে চলাচলের অযোগ্য হয়ে পড়বে। ফলে স্থানীয় অর্থনীতি, শিক্ষা ও চিকিৎসা ব্যবস্থায় নেতিবাচক প্রভাব পড়বে। জনদুর্ভোগ লাঘব ও সরকারি সম্পদ রক্ষায় অবিলম্বে প্রশাসনের কঠোর নজরদারির দাবি জানান তারা।
এ ব্যাপারে উপজেলা প্রকৌশলী মুহাম্মদ রাকিবুল ইসলাম জানান-ডাম্প ট্রাকের ওজন বহন করার ক্ষমতা আমাদের আঞ্চলিক সড়কগুলোর নেই। ডাম্প ট্রাকে আমাদের সড়কগুলো যে নষ্ট করছে তা আমরা দেখছি। গত কয়েকদিন আগেও বাড়েরা গ্রামের ব্রিজটি দেখতে গিয়েছিলাম। ওইসব ডাম্প ট্রাক চলাচল রোধে পুলিশসহ আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করার আহবান করছি।
চান্দিনা উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) মোহাম্মদ আশরাফুল হক জানান- অতিরিক্ত ভারী বহনকারী গাড়ি সনাক্ত করতে আমাদের কোন ব্যবস্থা নেই। তারপরও এই ধরণের ডাম্প ট্রাক চলাচল রোধে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে এবং যে ব্রিজ ও কালভার্টগুলো ভেঙেছে সেগুলো দ্রুত সংস্কারের ব্যবস্থা গ্রহণ করবো।