শেষ রক্ষা হলো না পাইলট মঈনুল হকের বিধবা হলো স্ত্রী
এখন চান্দিনা।। নিউজ ডেস্ক।।
শেষ রক্ষা হলো না সেই মাইলস্টোন স্কুল এন্ড কলেজের উপরে বিমান বিধ্বস্ত হয়ে পড়া পাইলটের।এক বছরের মধ্যে বিধবা হলো তার বউ।
ঢাকার আকাশ আজ যেনো নীরব, নিস্তব্ধ। চারদিকে শুধু কষ্ট আর কান্নার ধ্বনি। মাইলস্টোন স্কুল এন্ড কলেজের উপর ভেঙে পড়েছে একটি ছোট যাত্রীবাহী বিমান। ঘটনাস্থলেই মৃত্যু হয়েছে বহু শিক্ষার্থী ও শিক্ষকের। কিন্তু তার চেয়েও বেশি কষ্টের আরেকটি গল্প লুকিয়ে আছে এই মর্মান্তিক দুর্ঘটনার আড়ালে—একজন পাইলটের জীবনের শেষ উড়ান ও তার স্ত্রী নীলা’র অকাল বিধবা হয়ে যাওয়ার অসহ্য বাস্তবতা।
পাইলটের নাম ছিল মঈনুল হক। বয়স মাত্র ৩১। সদা হাস্যোজ্জ্বল, সাহসী ও দায়িত্ববান। বিয়ে হয়েছিল এক বছর আগে, ভালোবেসেই—নীলার সাথে। নীলা তখন বিশ্ববিদ্যালয়ের শেষ বর্ষে। খুব সাধ করে, হাজারটা স্বপ্ন বুনে সংসার সাজিয়েছিল তারা। ছোট্ট একটা বাসা, একসাথে সকালের নাশতা, অফিস যাওয়ার আগে মঈনের ললাটে চু*মু খেয়ে নীলার বিদায়—সবকিছুই ছিল যেন একটা প্রেমময় গল্পের মত।
তাদের বিয়ের এক বছর পূর্ণ হওয়ার কথা ছিল ঠিক এক সপ্তাহ পর।
সেদিনও মঈনুল যথারীতি ফ্লাইটের জন্য বেরিয়েছিলেন। তিনি জানতেন না যে এই উড়ানই হবে তার জীবনের শেষ। বিমানটির ইঞ্জিনে হঠাৎ সমস্যা দেখা দিলে কন্ট্রোল টাওয়ারের সাথে শেষ যোগাযোগে তিনি শুধু বলেছিলেন,
"আমি চেষ্টা করব জনবসতি এড়িয়ে যেতে... স্কুলের দিকেই যাচ্ছি, ওখানে খালি মাঠ আছে বলে মনে হচ্ছে।"
কিন্তু সেই মাঠের পাশে ছিল মাইলস্টোন স্কুল এন্ড কলেজ। নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে বিমানটি সরাসরি স্কুল ভবনের ওপর বিধ্বস্ত হয়। মুহূর্তেই পুড়ে ছাই হয়ে যায় শিশুময় একটি ভবিষ্যৎ, আর একই সাথে নিঃশেষ হয়ে যায় মঈনুল হক নামের একজন সাহসী পাইলটের জীবন।
দুর্ঘটনার সংবাদ পেয়ে ছুটে গিয়েছিল নীলা। তখনো কেউ নিশ্চিতভাবে কিছু বলতে পারেনি। মানুষজন বলছিল, হয়তো পাইলট বাইরে লাফ দিয়ে বেঁচে গেছেন। হাসপাতালের বারান্দায় দাঁড়িয়ে নীলা শুধু প্রার্থনা করছিল,
"ও ঠিক আছে, ও ঠিক ফিরে আসবে।"
কিন্তু কিছুক্ষণ পর চিকিৎসক এসে জানালেন,
"আমরা দুঃখিত। উনি... আর নেই।"
নীলা ভেঙে পড়েছিল। শব্দহীনভাবে চিৎকার করেছিল মনভর্তি। তখনো তার হাতের মেহেদির রঙ ফিকে হয়নি, তখনো মাথার সিঁথিতে ছিল সিঁদুর। অথচ আজ, এক বছরের মাথায় সে হয়ে গেলো বিধবা।
তার জীবনের আলোটুকু নিভে গেল এক নিমিষেই।
প্রতিদিন রাত হলে সে মঈনের পোশাক জড়িয়ে শুয়ে পড়ে। ফোনের রেকর্ডে রাখা শেষ কথাগুলো শোনে—
"নীলা, আজকে ফিরে এসে আমরা বাইরে খাবো। তোমার পছন্দের বিরিয়ানি কিনে আনবো।"
কিন্তু সেই “ফিরে আসা” আর হয়নি।
নীলা এখনো মঈনের শেষ চিঠিখানা বালিশের নিচে রাখে। যেখানে লেখা—
"জীবনে যদি কখনো কিছু হয়ে যায়, তুমি কাঁদবে না, তুমি শক্ত থেকো। তোমার জন্য আমার ভালোবাসা কখনো কমবে না, তুমি আমার গর্ব।"
কিন্তু কীভাবে শক্ত থাকবে নীলা? যে মানুষটা তার জীবন হয়ে উঠেছিল, তার হাসি, তার সকাল, তার রাত—সে নেই। শুধু আছে একটা ছবি, কিছু স্মৃতি আর বুক ফাটানো এক শূন্যতা।
শেষ রক্ষা হলো না পাইলটের, আর শেষ রক্ষা হলো না ভালোবাসারও।
এই গল্প শুধু একটি দুর্ঘটনার নয়, এই গল্প হাজারো স্বপ্নভঙ্গের, ভালোবাসা হারানোর, আর অকাল বিধবার চোখের জলের গল্প। এমন গল্প যেটা প্রতিদিন বহু ঘরে জন্ম নেয়, কিন্তু কেউ শুনে না। শুধু নীলার মত কেউ একজন একা রাত জেগে ভাবে—
"যদি ও একটু দেরি করতো, হয়তো আজও আমার হাতটা ধরতো..."